বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫
ঢাকা বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১
The Daily Post

ভোলার তেতুলিয়া নদীতে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন 

ভোলা প্রতিনিধি

ভোলার তেতুলিয়া নদীতে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন 

প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিলেও দ্বীপজেলা ভোলার তেতুলিয়া নদীতে থেমে নেই অবৈধ বালু উত্তোলন। তেতুলিয়ায় কোনো বালু মহাল না থাকলেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার কারণে বছরের পর বছর বর্ষা মৌসুমে বেড়েছে নদীভাঙন। বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর জীববৈচিত্র্য। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। 

আগে দিনরাত সমান তালে বালু উত্তোলন করা হলেও কোস্টগার্ডের নিয়মিত অভিযান ও উপজেলা প্রশাসন কৃতক জেল-জরিমানা, বলগেট-ড্রেজার জব্দ করার কারণে দিনের বেলা বন্ধ থাকলেও এখন শুধু গভীর রাতে চলছে অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের বালু উত্তোলন। 

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) জেলার  বোরহানউদ্দিন উপজেলার তেতুলিয়া নদীর হাঁসের চর, চরলতিফ, লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের গজারিয়া খালগোড়া চরসহ কয়েকটি ছোটবড় চর এলাকার বাসিন্দা ও নদীতে নিয়মিত মাছধরা জেলেদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান প্রতিরাতে ১০-১২টি ড্রেজার দিয়ে লাখ লাখ ঘন ফুট অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

হাঁসের চরের বাসিন্দা মান্নান সিপাই জানান, বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর ইউনিয়ন সংলগ্ন তেতুলিয়া নদির হাঁসেরচর, চরলতিফসহ কয়েকটি চরের কাফ (চরের তীরবর্তী অঞ্চল) থেকে দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। কোস্টগার্ডের এসে আটক করে। আবার অনেক সময় কোস্টগার্ড এবং এসিল্যান্ড স্যার আসার খবর পেয়ে তারা আগেই পেয়ে পালিয়ে যায়। তিনি আর বলেন, এখন দিনের বেলা বালু কাটে (উত্তোলন) না, রাতে বালু কাটে।

তেতুলিয়া নদীতে নিয়মিত মাছ শিকার করেন মো. রাসেল নামে এক জেলে জানান, রাতে যখন মাছ ধরতে নদীতে যাই রাত ২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ৪-৬ টি ড্রেজার একযোগে বালু উত্তোলন করে বিকট শব্দের নদীতে থাকা দায়, জালে ঠিকমতো মাছও পাইনা। 

লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের গজারিয়া খালগোড়া চর এলাকার বাসিন্দা ও চরে তরমুজ চাষি মো. হান্নান জানান, তেঁতুলিয়া নদীর চরব্যারেট, খালগোড়াচরসহ বদরপুর ইউনিয়ন সংলগ্ন কয়েকটি চরে আগে দিনের বেলা ড্রেজার মেশিন দিয়ে নিয়মিত বালু উত্তোলন করত বালু ব্যবসায়ীরা কয়েক দিন আগে লালমোহননের ইউএনও স্যার দুজনকে চার লাখ টাকা জরিমানা করছে, কোস্টগার্ডকে নদীতে টহল দিতে দেখেছি, অহন আর আগের মত দিনে বালু উঠায় না, রাতে ৫-৬ টা ড্রেজার দিয়ে বালু উঠাইতে দেখছি। তবে একেক দিন একেক রকম কোনো দিন ২টা আমার কোন দিন ৩টা বালু উঠায়। অবৈধভাবে বালু উঠানোয় আমাগো নানা রকম অসুবিধা হয়।

পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলা এবং দশমিনা এলাকা থেকেও বেশ কয়েকটি ড্রেজার মেশিন  লালমোহন ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার তেতুলিয়া নদীর সীমানায় এসে বাণিজ্যিক কাজে অবৈধ বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা।  

জেলার সিনিয়র সাংবাদিক ও ভোলা প্রেস ক্লাব সভাপতি অ্যাড. নজরুল হক অনু বলেন তেতুলিয়া নদীতে  কোনো বালু মহাল নেই, সেখানে  দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন অধীন বিসিজি ভোলার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, তেতুলিয়া নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে গত ১ মাসে কোস্টগার্ড সফল ২টি অভিযান পরিচালনা করেছে এ বিষয় কঠোর অবস্থানে রয়েছে কোস্টগার্ড। 

ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান জানান, তেতুলিয়া নদীতে কোনো বালু মহাল নেই, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থান রয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের লালমোহন ও বোরহানউদ্দিন উপজেলায় বেশ কয়েকটি সফল অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমানা এবং বলগেট  জব্দ করা হয়েছে। শিগগিরই অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টিএইচ